মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীকে কি বলা হতো?


 মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীকে কি বলা হতো?

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীকে বলা হতো "মিত্রবাহিনী"। 


মিত্র বাহিনীর চিত্র


মিত্র বাহিনীকে ইংলিশে বলা হয় (Joint Forces of Bangladesh and India)

মিত্রবাহিনী বলতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের বাহিনী এবং ভারতের সেনাবাহিনীর সম্মিলিত বাহিনীকে বোঝানো হয়, যারা একসঙ্গে যুদ্ধ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছিল।


➤ মিত্রবাহিনীর গঠন:

  • বাংলাদেশের অংশ:

    • মুক্তিযোদ্ধারা (বাংলাদেশের সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সাধারণ জনগণের সমন্বয়ে গঠিত বাহিনী)

    • মুক্তিবাহিনী মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল:

      • নিয়মিত বাহিনী (ফোর্স)

      • গেরিলা বাহিনী

      • প্রতিরোধ বাহিনী (স্থানীয় পর্যায়ে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধা দল)

  • ভারতের অংশ:

    • ভারতীয় সেনাবাহিনীর তিনটি প্রধান শাখা:

      • স্থলবাহিনী (Army)

      • নৌবাহিনী (Navy)

      • বিমানবাহিনী (Air Force)

  • উদ্দেশ্য:

    • পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে দ্রুততম সময়ে পরাজিত করা।

    • বাংলাদেশকে মুক্ত করা এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা।


➤ মিত্রবাহিনীর নেতৃত্ব:

বাহিনীনেতৃত্ব
বাংলাদেশ                       মেজর জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী (মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক)
ভারতলেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা (পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার)
  • মিত্রবাহিনীর পুরো অভিযানটি কো-অর্ডিনেটেড ছিল এবং একসাথে পরিকল্পনা করা হতো।

  • ভারতের প্রধান সামরিক স্ট্র্যাটেজিস্ট ছিলেন ফিল্ড মার্শাল স্যাম ম্যানেকশ।


➤ মিত্রবাহিনীর বড় বড় অভিযান:

  • মুক্তিযুদ্ধের তিনটি ফ্রন্ট খুলে আক্রমণ করা হয়েছিল:

    1. পূর্ব দিক থেকে

    2. উত্তর দিক থেকে

    3. পশ্চিম দিক থেকে

  • ঢাকা ছিল মূল লক্ষ্য।

  • মিত্রবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীকে দ্রুত কোণঠাসা করে ফেলে, এবং ঢাকার দিক থেকে চারদিক ঘিরে ফেলে।


➤ মিত্রবাহিনীর বিজয়:

  • মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

  • ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানের ৯৩,০০০ সৈন্য আত্মসমর্পণ করে — ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক আত্মসমর্পণের একটি।

  • এই দিন বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। 


➤ মিত্রবাহিনীর ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

  • এই বাহিনীর সমন্বয়ে বাংলাদেশের মুক্তি দ্রুত নিশ্চিত হয়েছিল।

  • ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রীর নিদর্শন হিসেবে আজও "মিত্রবাহিনী" স্মরণ করা হয়।

  • ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বাংলাদেশ ভারতের সহায়তার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে।


➤ একটি বিশেষ কথা:

মিত্রবাহিনীর জন্যই ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের শেষে বিজয়ের হাসি এত দ্রুত এসেছিল। এটি ছিল ভ্রাতৃত্বের যুদ্ধ, শুধু কূটনৈতিক নয়, রক্তের বন্ধনেও গাঁথা।










Post a Comment

0 Comments